অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রামীণফোন I

Thursday, December 6, 20120 comments


 দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে মোবিক্যাশসেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধা দিচ্ছে অপারেটরটি। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রামীণফোনকে এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টাকা জমা ও উত্তোলনসেবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মোবিক্যাশের মাধ্যমে তিন ধরনের সেবা দেয়ার অনুমোদন রয়েছে গ্রামীণফোনের। এগুলো হলো— রেল ভ্রমণের টিকিট বিক্রি, ক্রিকেট খেলার টিকিট বিক্রি ও পরিষেবা বিল পরিশোধ। কিন্তু মোবিক্যাশ এ তিন সেবার বাইরেও গ্রাহকদের ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটসেবা দেয়ার জন্য এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
গ্রামীণফোন অনুমোদনবিহীন ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটসেবা প্রদানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চলতি বছরের ১৩ আগস্ট গ্রামীণফোনের সঙ্গে মোবিক্যাশ এজেন্সি হিসেবে ময়মনসিংহের একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তির ব্যাপ্তি হলো ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউটসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান। তবে চুক্তিপত্রের কোথাও উল্লেখ নেই, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার বলেন, ‘ব্যাংকিং সেবা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। অপারেটর এ ক্ষেত্রে শুধু সহযোগিতা দিতে পারবে। গ্রামীণফোনের মোবিক্যাশ অনুমোদিত তিন ধরনের সেবার বাইরেও সেবা দিচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাই তাদের চিঠি দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে গ্রামীণফোনের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস সৈয়দ তাহমিদ আজিজুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি, গ্রামীণফোন কোনো ব্যাংকিং করছে না। ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।’
বঞ্চিত জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা সুবিধা পৌঁছে দিতে গত বছর ৩১ মার্চ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, এ সেবা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে। মোবাইল অপারেটররা শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ঘটছে এর উল্টোটা।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদনেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টুজি লাইসেন্স নবায়নের আগে টিকিট বিক্রি ও বিল পরিশোধের জন্য মোবিক্যাশের অনুমোদন নিয়েছিল গ্রামীণফোন। তবে এর মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান অর্থাৎ ব্যাংকিংয়ের কোনো অনুমোদন ছিল না। কিন্তু টুজি লাইসেন্স নবায়নের পর তারা আর এ সেবার অনুমোদন নবায়ন করেনি। কাজেই মোবিক্যাশের সেবা প্রদান অবশ্যই অনুমোদনবিহীন।
মোবিক্যাশ এজেন্টদের সঙ্গে গ্রামীণফোনের চুক্তি অনুযায়ী, সেবার মাধ্যম হিসেবে কোনো ব্যাংক না থাকায় মোবিক্যাশ এজেন্টরা পুরোপুরি গ্রামীণফোনের নিয়ন্ত্রণে।
মোবিক্যাশের এজেন্ট বরগুনার রহমান বিজনেস কর্নারের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, ‘গেল মাসের শেষ দিকে আমি গ্রামীণফোনের মোবিক্যাশের এজেন্সি নিয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দিন ধরে আমরা ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে মোবিক্যাশ এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যবহূত এক ম্যানুয়ালে উল্লেখ করা হয়েছে— মোবিক্যাশ গ্রামীণফোনের একটি ব্র্যান্ড, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত। ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটসেবার মাধ্যমে এজেন্টদের প্রথম ধাপে ১৭ দশমিক ৫৭, দ্বিতীয় ধাপে ২৮ দশমিক ৫৪ ও তৃতীয় ধাপে ৪২ দশমিক ৯৪ শতাংশ মুনাফা করার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত মোবাইলে আর্থিক সেবা নীতিমালার ৬ ধারায় আছে— বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত দুই মাধ্যমেই মোবাইলের সাহায্যে আর্থিক সেবা প্রদানের বিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে এ সেবা দেয়া যাবে।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. NETWORK - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger